জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA): দক্ষ জনশক্তি গঠনের অগ্রদূত
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA): দক্ষ জনশক্তি গঠনের অগ্রদূত
Blog Article
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA): দক্ষ জনশক্তি গঠনের অগ্রদূত
বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে তার দক্ষ মানবসম্পদের উপর। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তিই একটি রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই উপলব্ধি থেকেই ২০১৮ সালে গঠিত হয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA)। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ একটি স্বতন্ত্র সংস্থা, যার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের মানবসম্পদকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দক্ষ করে গড়ে তোলা।
গঠনের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
বাংলাদেশের Vision 2041 এবং SDG লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো দক্ষ, আধুনিক, ও প্রযুক্তি-সক্ষম জনশক্তি গড়ে তোলা। নানা মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিলেও একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় ব্যবস্থার অভাব ছিল। সেই অভাব পূরণে NSDA গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্যগুলো হলো:
দক্ষতা উন্নয়নে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমন্বয়
দক্ষতা যাচাই এবং সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কোর্স উন্নয়ন
মূল কার্যক্রম ও উদ্যোগ
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
জাতীয় দক্ষতা মান ফ্রেমওয়ার্ক (NSQF): এটি একটি স্তরভিত্তিক কাঠামো, যেখানে যে কোনো দক্ষতা বা প্রশিক্ষণ কোর্সকে নির্দিষ্ট মাত্রায় শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এতে করে প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানে মূল্যায়ন করা যায়।
Recognition of Prior Learning (RPL): যারা আগে থেকেই দক্ষ, কিন্তু কোনো সার্টিফিকেট নেই, তারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে যাচাইকৃত সনদ পেতে পারে। এতে করে অভিজ্ঞ শ্রমিকরা সম্মান ও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ পান।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন তথ্যব্যবস্থা (NSDIS): এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, এবং নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য রাখা হয়।
শিল্পখাত ভিত্তিক কাউন্সিল (ISC): প্রতিটি বড় শিল্পখাতের জন্য আলাদা কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে, যারা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতা নির্ধারণে সহায়তা করে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
NSDA এর কার্যক্রম বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেমন:
অঞ্চলভিত্তিক অসম প্রশিক্ষণ সুবিধা
প্রশিক্ষণ-পরবর্তী চাকরি নিশ্চিত না হওয়া
শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর দুর্বল সংযোগ
তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও NSDA ভবিষ্যতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার নাম। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি উপযোগী শ্রমিক তৈরি, তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, এবং উদ্যোক্তা তৈরি—এই তিনটি ক্ষেত্রেই NSDA গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উপসংহার
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। জনসংখ্যাকে বোঝা থেকে সম্পদে রূপান্তর করার জন্য NSDA-এর কার্যক্রম অনন্য। সরকারের পাশাপাশি যদি বেসরকারি খাত, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ও নাগরিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কাজ করে, তবে দক্ষ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
Report this page